আইপি এড্রেস। নেটওয়ার্কিং পর্বঃ ২.১
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো ……… এটা কি ২৪৪১১৩৯
এই গানটা অনেকেই আমরা শুনেছি। তো আপনি হয়তো ভাবতে পারেন ব্লগটা হচ্ছে আইপি এড্রেস নিয়ে আর আমি কি গানের লিরিক লিখলাম! আসলে ব্যাপারটা তা নয় । মূলত এখনে একটা ফোন নম্বর রয়েছে। এখন খেয়াল করে দেখুন তো আপনার আমার সবার মোবাইল/ফোন নম্বরে কেউ কল দিলেই কিন্তু স্পেসিফিকভাবে যাকে কল দেয়ার কথা তার নম্বরেই যায়। অর্থাৎ নম্বরটা ইউনিক। তো ভাবুন তো একটা নেটওয়ার্কে কানেক্টেড অনেক ডিভাইসের ভীড়ে কোনটা কি সেটা কীভাবে আমরা নির্ণয় করি? হ্যা, এখানেই চলে আসে “আইপি” এড্রেস এর কথা।
যেকোন নেটওয়ার্কে যদি আমরা কানেক্টেড ডিভাইস(পিসি/মোবাইল ইত্যাদী) কে ইউনিকলি আইডেন্টিফাই করতে চাই এবং কমিউনিকেশন এর ব্যবস্থা চালু করতে চাই তবে আমাদের প্রত্যেক ডিভাইসকে একটা ইউনিক আইপি এড্রেস দেয়া লাগবে।
আইপি মানে ইন্টারনেট প্রটোকল। অর্থাৎ ইন্টারনেট এর কতকগুলো আইনকানুন যা মানতেই হবে।
বর্তমানে দু ধরনের আইপি এড্রেস প্রটোকল বিদ্যমান আছে।
১) IPv4ঃ ইহা মূলত ৩২ বিটের হয়ে থাকে
২) IPv6ঃ ইহা মূলত ১২৮ বিটের হয়ে থাকে।
এদের পার্থক্য না হয় অন্য পর্বে দেখব আপাতত আমরা IPv4 নিয়ে দেখি।
আগেই বললাম ইহা ৩২ বিটের এড্রেস স্পেস ধারন করতে সক্ষন। আপনারা ইন্টারনেটে অনেক সময় দেখতে পারেন 43.55.69.77 বা 192.168.2.66 ইত্যাদী টাইপ এড্রেস! এগুলাই মূলত আইপি এড্রেস।
খেয়াল করে দেখুন এই এড্রেস গুলোটে ডট[.] দিয়ে ৪ টা অংশ কে আলাদা করা হয়েছে। আমাদের হৃৎপিন্ড যেমন ৪ প্রকোষ্ট বিশিষ্ট তেমনি আইপিভি৪ এর এড্রেসটাও ৪ টি অংশে বিভক্ত। তার মানে ৩২ / ৪ = ৮ টি করে বিট একেকটি অংশে বিদ্যমান। নিচের ছবিটি একটু খেয়াল করুনঃ
উপরের ছবিটি দেখলেই বুঝতে পারবেন ৩২ বিট এর এড্রেস টা ৮ বিট করে ৪ টা অংশে বিভক্ত। এই পার্ট/অংশগুলোকে “Octet” বলে।
প্রশ্ন হতে পারে ৩২ বিট দিয়ে কি এতো গুলো ডিভাইস পৃথিবীতে আছে সবাইকে ইউনিক এড্রেস দেয়া সম্ভব? উত্তরঃ না। তবে সমাধান? তাই তো ১২৮ বিটের ভার্সন ৬ এর এড্রেস আবিষ্কার করা হয়। তবে বর্তমানে ভার্সন ৪ দিয়েই অধিকাংশ কাজ চলছে। তো কীভাবে? 2³² = 4,294,967,296 টি কম্বিনেশন সম্ভব। আর আইপিভি৬ এর ক্ষেত্রে 2¹²⁸ = 340,282,366,920,938,463,463,374,607,431,768,211,456 টি এড্রেস সম্ভব !!!
কমপ্লেক্সিটি এবং সহজলভ্যতার জন্য আমরা এখনো আইপিভি৪ বেশি ব্যবহার করি। যদিও ৭০০ কোটি মানুষ এবং ধরে নেই প্রত্যেকের একাধিক ডিভাইস আছে তবে এতো সংখ্যাক ডিভাইসের জন্য ৩২ বিটের এড্রেস স্পেস কমই হয়ে যায়।
সমাধান দিতে একটি কনসেপ্ট তৈরী হলো সেটা হলো “NAT” অর্থ্যাৎ Network Address Translation । এর আগে আমাদের জেনে নেয়া উচিৎ আইপি এড্রেসকে দুটো ক্যাটাগরীতে ভাগ করা হয়। যথাক্রমেঃ
১) প্রাইভেট আইপিঃ নাম শুনেই বুঝা যায় লোকাল নেটওয়ার্কে কানেক্টেড ডিভাইসগুলোকে যেসকল আইপি এড্রেস দেয়া হয়।
২) পাবলিক আইপিঃ যখন নেটওয়ার্কটা হয়ে যায় গ্লোবাল বা ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড হতে হলে তখন পাবলিক আইপি এড্রেস ডিভাইসে এস্যাইন করা হয়।
ধরে নিন, আপনার বাসায় ৫ টা পিসি। এখন ৫ টা পিসিকে যদি ৫টা পাবলিক আইপি দিয়ে তবে এতো মানুষ পৃথিবীতে তাদের কমবেশি এক বা একাধিক ডিভাইস সবারই আছে এবং সবাই চাইবে তার প্রত্যেকটা ডিভাইসের জন্য ইউনিক পাবলিক আইপি !!
কিন্তু বাস্তবে এতো আইপি দেয়া সম্ভব? না ! সম্ভব না। তাই যেটা করা হয় আপনার বাসায় যখন ইন্টারনেট সংযোগ নেন তখন আপনাকে ১ টা পাবলিক আইপি দেয়া হয় আর আপনার যতগুলো ডিভাইস আছে এদের প্রত্যেককে একটা করে প্রাইভেট আইপি দেয়া হয়। তো আপনি পেলেন ১ টি পাবলিক আইপি আর ৫ টি প্রাইভেট আইপি। এখন এই পাবলিক আর প্রাইভেট এর মাঝে একটা সিস্টেম দরকার ম্যানেজ করার জন্য আর সেটাই হচ্ছে “NAT” !
বিস্তারিত “NAT” নিয়ে আরেকটি পর্ব হবে। তবে আপাতত হাল্কা কনসেপ্ট রাখুন যে পাবলিক আইপি আর প্রাইভেট আইপির মাঝে এক প্রকার ট্রান্সলেশন হয় কেননা কোন ডাটা কোন ডিভাইসের জন্য সেটা বুঝতে হলে এক প্রকার সিস্টেম দরকার হয়। এটাই “NAT”।
যাক ফিরে আসি আইপি৪ এড্রেস নিয়ে।
সাধারনত প্রত্যেকটা আইপি এড্রেসে দুটো অংশ থাকেঃ
১) নেটওয়ার্ক পার্ট
২) হোস্ট পার্ট
এখন এগুলা কি আর আইপি এড্রেসের ক্লাস কি এসব জানতে চখ রাখুন পর্ব ২.২ তে।
আইপি সাবনেট সম্পর্কে জানতে ঘুরে আসুন পর্ব ১ হতে ।
বিঃদ্রঃ যদি কোন ভুলত্রুটি থাকে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।