সহজে শিখি সাবনেটিং । নেটওয়ার্কিং পর্ব ২.২

Md Mahmudul Huq Topu
6 min readSep 13, 2019

--

শুরুতে একটু ক্ষুদা নিবারণ করা যাক। বন্ধুরা মিলে পিজ্জা খেতে গেলাম। অর্ডার করার মাত্রই এসে পড়ল পিজ্জা । তবে রেস্ট্রুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ভুলে স্লাইস করতে ভুলে গেলেন। তখন তাদের আবার ডাকা হলো সবাইকে একটা টুকরো করে ভাগ করে দিতে।

নিচের ছবিটা দেখলেও বুঝা গেল কীভাবে ৬ জন কে একটা পিজ্জা ভাগ করে দেয়া হলো। ছোটবেলায় মিনা কার্টুনে ভাগ করে খাওয়ার এপিসোড মনে পড়ে গেল।

একই ভাবে একটা নেটওয়ার্ককে যখন আমরা কয়েকটা টুকরো করি (সাবনেট) করি তখন এই প্রক্রিয়াকে আমরা নেটওয়ার্কিং ভাষায় বলি “সাবনেটিং”

কি লাভ এটা করে? দেখুন বিশাল বড় নেটওয়ার্ক ম্যানেজ করা কঠিন, আর একটা অফিসে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে রিকোয়েরমেন্ট ভিন্ন হতে পারে। তাই আলাদা আলাদা করে সাবনেট তাদের দিলে ম্যানেজ করাও সহজ হবে আর কোন সমস্যা হলে খুঁজে বের করাও সহজ হবে। এখন আসি কীভাবে করা যায়।

এর আগে একটু ক্লাস নিয়ে অল্প আইডিয়া নেই। (এটার পূর্নাঙ্গ পর্ব আসবে)। আইপি এড্রেস ভার্সন ৪ এ মোট ৩২ বিটের এড্রেস থাকে। এখন এই ৩২ কে ৪ টা অকটেটে ভাগ করা হয়। প্রত্যেকটা অকটেট ৮ বিটের হয়ে থাকে।
এখন এই বিটগুলো দুইভাগে বিভক্ত থাকে একটা হচ্ছে “নেটওয়ার্ক” পার্ট আরেকটি হচ্ছে “হোষ্ট ” পার্ট।

কয়টা বিট নেটওয়ার্ক পার্টে যাবে আর কয়টা বিট হোষ্ট পার্টে যাবে এটার উপর ডিপেন্ড করে কতগুলো ক্লাসে ভাগ করা হয়েছে ।
ক্লাস এ তে প্রথম ৮ বিট নেটওয়ার্ক পার্ট আর বাকী ২৪ বিট হোষ্ট পার্ট। তেমনি ক্লাস বি , সি ,ডি, ই এই ৫ টি ক্লাসে ভাগ করা হয়।

এইযে নেটওয়ার্ক পার্ট এটা দ্বারা আমরা বুঝি আইপি এড্রেসটি কোন নেটওয়ার্কের অংশ। এটা ফিক্স থাকে। আর হোষ্ট পার্ট বিভিন্ন কম্বিনেশন হয়ে থাকে। এটা নিয়ে লিখলে অনেক বড় হবে। ধরে নেই আপাতত এই ক্লাস নামক কিছু আছে।
নিচের ছবিতে এটা ইলাস্ট্রেট করা হয়েছে। কোন এড্রেস কোন ক্লাসের সেটা অন্য পর্বে আলোচনা হবে ।

আরেকটা পদ্ধতি আছে যেখানে এই ক্লাস নিয়ে চিন্তাই করা হয়না। সেটাকে ক্লাসলেস আইপি বলে ! এখন ক্লাসলেসে কোন ফিক্স নেটওয়ার্ক পার্ট নেই তার মানে ফ্লেক্সিবিলিটি বেশি কেননা যখন কোন কিছু ফিক্সড থাকে আমাদের একচুয়াল রিকোয়েরমেন্ট এর সাথে সেটা অনেক ক্ষেত্রেই নাও মিলতে পারে।

তো ক্লাসবিহীন এই পদ্ধতির নাম “CIDR” অর্থাৎ Classless Inter Domain Routing
Example: 192.168.100.0/25 এই স্ল্যাশ ২৫ দিয়ে বুঝায় ২৫ তি বিট ৩২ বিটের মধ্যে নেটওয়ার্ক পার্টে ব্যবহার হয়ে গেছে।

চলুন একটা এক্সাম্পল দেখি।

উপরের এই এক্সাম্পলে একটা আইপি এড্রেস দেয়া 220.50.100.0/24 তো ২৪/৮ = ৩ অর্থাৎ ৩ টি অকটেট নেটওয়ার্ক পার্টে ব্যবহার করা হয়েছে। তাহলে হোষ্ট পার্টে আছে ৩২-২৪ = ৮ বিট। এক্ষেত্রে শেষ ৮ বিট। নেটোয়ার্ক পার্ট বুঝাতে 1 আর হোষ্ট পার্ট বুঝাতে 0 ব্যবহার করা হয়। যেহেতু প্রত্যেক অকটেট ৮ বিট আর বিট মানে ০/১ তাহলে যতগুলো বিট নেটওয়ার্ক পার্টে ততগুলা ১ হবে আর হোষ্ট পার্টে যারা আছে ততগুলা ০ হবে ।

সাবনেট মাস্ক তাহলে ২৫৫.২৫৫.২৫৫.০ দিয়ে কি বুঝায়? ওইযে বললাম ০ আর ১ এর হিসাব। বিসিডি কনভার্ট করলে ১১১১১১১১ দ্বারা ২৫৫ বুঝায়।
এখন যেকোন আইপি এড্রেসে সব হোষ্ট দিয়ে আমরা কম্বিনেশন বানাতে পারব না। প্রথম অর্থার ০ দিয়ে নেটওয়ার্ক এড্রেস বুঝায় অর্থাৎ এটি কোন নেটওয়ার্কের অংশ/ আর শেষ ২৫৫ দিয়ে এটা ব্রডকাস্টের জন্য প্রিসার্ভ থাকে।
তাহলে এই দুইটা বাদে কয়টা কম্বিনেশন/সমাবেশ সম্ভব?
2⁸ -2 = 256–2 = 254 ! তাহলে আমরা ২৫৪ টা আইপি এড্রেস এই সাবনেট থেকে পাবো। মজার ব্যাপার ২৫৪ টা ডিভাইসে এই আইপি আমরা চাইলে দিতে পারব স্পেসিফিক ভাবে।

এই এক্সাম্পলটা একটু ভিন্নভাবে দেখি। 220.50.100.0/25 দেয়া আছে।

কি বুঝায় এটি দিয়ে? এখনে ২৫ টি বিট নেটওয়ার্ক পার্টে ব্যবহার হয়েছে। এখন ২৫ তম বিট আগের নেটওয়ার্কের বেলায় ০ ছিল এখন সেটা ১ । এর মানে আগের সেই নেটওয়ার্ককে পিজ্জার মতো ভাগ করা হল কিন্তু কয়টা ভাগে?
সহজ উত্তর হোস্ট পার্টে যতগুলা শুন্যকে ১ বানাও হয়েছে সেটাকে ২ এর পাওয়ার করলে যা হয়। এক্ষেত্রে 2¹ = 2 টি সাব নেটওয়ার্কে ভাগ করা হয়েছে।
এইবার সাবনেট মাস্ক আগেরটা মতো থাকবেনা কেননা শেষ অকটেটে এখন আগের মতো ০০০০০০০০ এর যায়গায় ১০০০০০০০ হয়ে গেছে যেটার ডেসিমাল কনভার্ট করলে ভ্যালু দ্বাড়ায় ১২৮।
তাহলে প্রত্যেকটা সাবনেটে কতগুলো আইপি দেয়া সম্ভব মানে কম্বিনেশন ? মনে রাখা দরকার যতুই ভাগ করিনা কেন ২ টি এড্রেস কিন্তু ব্যবহার করা যাবেনা। শুরু এবং শেষ ।

তাহলে এইবার হোষ্ট পার্টে শূন্য আছে ৭ টি ! তাহলে কম্বিনেশনের সূত্র মতে
আমরা হোষ্ট পাবোঃ 2⁷ -2 = 126 !

এইবার ভাগাভাগি শেষ, চলুন বের করি কিছু তথ্য

এই ক্ষেত্রে ৪র্থ অকটেটে ১০০০০০০০ কে ডেসিমালে কনভার্ট করলে দ্বাড়ায় ১২৮ তাহলে প্রত্যকে সাবনেটে ব্লক সাইজ ১২৮ যার মধ্যে ১২৬ টি ব্যবহার যোগ্য।
১ ম সাবনেট তাহলে শুরু হবে ০ থেকে ১২৭ পর্যন্ত যেখানে ১ থেকে ১২৬ পর্যন্ত ভ্যালিড হোষ্ট অর্থাৎ ১২৬ টি।

২য় সাবনেট তাহলে শুরু হবে ১২৮ থেকে ২৫৫ পর্যন্ত যেখানে ভ্যালিড হোষ্ট হবে ১২৯ থেকে ২৫৪ পর্যন্ত অর্থাৎ ১২৬ টি।

এখন আরেকতি বিট হোষ্ট পার্ট থেকে নিয়ে নেই । এইবার তাহলে কয়টা ১ আর কয়টা শুন্য থাকল ?
উত্তরঃ ২ টি ১ আর ৬ তি শূন্য।
এইবার তাহলে সাবনেট মাস্ক কি হবে ? ২৫৫.২৫৫.২৫৫.?

উত্তরঃ ১১০০০০০০ কে কনভার্ট করলে ডেসিমালে ১৯২ । এইযে দুটো বিট নিয়ে নিলাম তাহলে এইবার কয়টা টুকরো হলো পিজ্জায়? থুক্কু নেটওয়ার্কে ?

2² = 4 বাহ চার টি সাবনেটোয়ার্কে ভাগ হয়ে গেল ! তাহলে এইবার প্রত্যেক সাবনেটে ভ্যালিড হোষ্ট কয়টি ? 2⁶ -2 = 6২ টি !
ধরুন এই চারটি সাবনেটকে আমরা ৪ টি ডিপার্টমেন্টে দিলাম, সিএসই, ইইই, বিবিএ, ফার্মাসি। তাহলে প্রত্যেক ডিপার্ট্মেন্ট ৬২ টি করে সর্বোচ্চ আইপি এড্রেস পাবে ।

তাহলে ব্লক সাইজ, ফার্স্ট ,ব্রডকাস্ট এড্রেসও বের করা সহজ হয়ে গেল।
০ থেকে ৬৩ পর্যন্ত মোট ৬৪ টি এড্রেস দেয়া হলো সিএসই কে।
৬৪ থেকে ১২৭ পর্যন্ত দেয়া হলো ইইই কে। সিমিলার্লি ছবিতে পরিষ্কার ভাবে দেয়া আছে।

একটা যাদু দেখাই চলুন। নিচের টেবিলে আছে যাদু !

নেটওয়ার্ক পার্ট থেকে ১ টি করে বিট নিতে থাকি। যখন ১ বিট নেই মাস্ক ভ্যালু দ্বাড়ায় ১২৮ (১০০০০০০০ এর ডেসিমাল)
সাবনেট দ্বাড়ায় ২ টি । ভ্যালিড হোষ্ট ১২৬ টি । CIDR ভ্যালু স্ল্যাশের ভ্যালু ২৪+১ = ২৫ । ব্লক সাইজ ১২৮।

সিমিলার্লি ২ বিট নিলে মাস্ক দ্বাড়ায় ১৯২ (১১০০০০০০ এর ডেসিমাল)। সাবনেট হয় ৪ টা। মজার ব্যাপার বাম থেক ডানে গেলে সাবনেটের ব্যালায় কেবল দিগুন হচ্ছে।

ভ্যালিড হোষ্টের বেলায় বাম থেকে ডানে গেলে দুই দিয়ে ভাগ করে ১ বিয়োগ করলেই হচ্ছে! ১২৬/২ = ৬৩ থেকে ১ বিয়োগ করলে হয় ৬২ ! সিমিলার্লি (৬২/২-১) = ৩১-১ = ৩০ ! মজা না? পুরাই পর্যায় সারণী টাইপ একটা ফিল আসছে।

CIDR তো সহজ ২৪ এর সাথে যতগুলা বিট নেয়া হলো সেটা যোগ করলেই হলো।
আর ব্লক সাইজ তো আরো জোস ! বাম থেকে ডানের নিয়মটা হলো দুই দিয়ে ভাগ করতে থাকুন ।
এখন মনে রাখা দরকার এটা কিন্তু আমাদের বেস নেটওয়ার্ক এর জন্য প্রযোজ্য যেখানে শুরুতে যখন ভাগ হয়নি তখন ২৪ বিট অলরেডি নেটওয়ার্ক পার্টে চলে গিয়েছিল। এরপর আমরা ১ বিট ২ বিট করে নিয়ে সাবনেট করা শুরু করি।

তবে জনগনের একটাই প্রশ্ন ৬ টা পর্যন্তই কেন বিট নিলাম ? ৭ কিংবা ৮ কেননা?

আচ্ছা সাবনেটের ফর্মুলা কি ছিল ? হোষ্ট পার্টে কয়টা এক আছে সেটা ২ এর পাওয়ার করলে যা হয় ততগুলা ভাগ করা যাবে?

আচ্ছা ৭ তি বিট নিলে, হোষ্ট পার্ট থাকে মাত্র ১টা শুন্য ! এখন ভ্যালিড হোষ্টের সুত্র মতে 2¹ -2= 0 ! এইখানেই সমস্যা ! কোন ভ্যালিড হোষ্টই পাওয়া গেলনা ! তাহলে আইপি এড্রেসই যখন নেই তাহলে নেটওয়ার্ক পার্টে ৭ বিট নিয়ে গেল কি লাভ?

আর ৮ বিট নিলে তো কিছুই থাকল না! কম্বিনেশন হয় কতগুলা শূন্য আছে তার উপর আর ১ কতগুলা সেটার উপর ডিপেন্ড করে কতগুলা সাবনেটওয়ার্ক বানানো সম্ভব।

তো , আজ এই পর্যন্তই। পুরো ইতিহাস লিখে ফেলেছি। ভালো থাকলে শেয়ার করুন। একটা শেয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়।

--

--

Md Mahmudul Huq Topu
Md Mahmudul Huq Topu

Written by Md Mahmudul Huq Topu

I’m a Full Stack Software Engineer at Skill Jobs.Also do youtubing(Metacentric Bangladesh) since 2014.

No responses yet